
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা খাদ্যশস্যের ভান্ডার হিসেবে বেশ সু-পরিচিত। এবার এই উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষকরা মনে করছেন। ইতিমধ্যে বোরো মৌসুমের ধান কাটা ও মাড়া শুরু হয়েছে। দিনরাত এক করে ধান কাটা ও মাড়াই-ঝাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণীরা। এবারে বোরো ধানের অধিক ফলন ও বাজার মূল্য ভালো পাওযায় বেশ খুশি উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবার উপজেলায় এ বছর বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ১শ হেক্টর। আর অর্জন হয়েছে ১৫ হাজার ২শ হেক্টর। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চাষাবাদ ১শ’ হেক্টর বেশি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০মে) গতকাল সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে ধান কেটে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষাণ-কৃষাণীরা। কৃষকরা ধান কেটে জমির পার্শ্ববর্তী মাঠে সাজিয়ে রাখছেন। শ্রমিক সঙ্কট থাকায় নিজেরাই কাটছেন ধান। কৃষাণীরা ধান মাড়াই-ঝাড়াই হওয়া ধানের খড়-কুটা পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। কেউ বা শুকানোর পর গোলায় তোলার জন্য বস্তায় ভরছেন ধান। গোলায় ধান তোলা শেষে কেউ কেউ আবার মাঠ জুড়ে রোদে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়েছেন সোনালি খড়। বর্ষাকালে গবাদি পশুর খাবারের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হবে এসব খড়।
উপজেলার দিওড় ইউনিয়নের ছোট মানুষমুড়া গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তাফা বলেন, আমি বোরো মৌসুমে এবার ৭ বিঘা জমিতে মিনিগেট (জিরা শাইল) ধান রোপন করছিলাম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ও আবহাওয়া পরিবেশ ভালো থাকায় আমি আমার জমিতে ১শ ৭৫ মণ কাচা ধান পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমার জমিতে রোপনকৃত ধান অন্যান্য কৃষকের তুলনায় আমি একটু আলাদাভাবে বেশি বেশি করে যত্ন ও পরিচর্যা করি এজন্য আমি আমার জমিতে বেশি ফসল পাই ।
চাঁদপুর গ্রামের কৃষক বাবু্ল আখতার বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে মিনিগেট (জিরা শাইল) ধান রোপন করছিলাম। আল্লাহতালার কৃপায় ও নিজের পরিশ্রমে আর আবহাওয়া ও ফসলে কোন রোগ বালাই না থাকায় এবার ফসল ভালো পেয়েছি। আমি আমার ১০ বিঘা জমিতে ২শ ৩০মণ কাচা ধান পেয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিকছন চন্দ্র পাল বলেন, পৌর এলাকা ও উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে এবার ১৫ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে বোরো রোপন করা হয়েছিলো। আর অর্জন থেকে ১শ হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। কৃষকদের রোপনকৃত ধানগুলো মধ্যে মিনিগেট (জিরা শাইল) ব্রি-২৮,২৯,৭৪, ৮১, ৮৮, ৮৯, ৯২ ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হাইব্রিড জাতের ধান। পৌর এলাকা ও ৭টি ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে সীমিত জনবল দিয়েই নিরলস ভাবে সু-পুরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো। এছাড়া ও পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বড় ধরনের ঝড়বৃষ্টি না হওয়ায় ধানে কোন প্রকার পোকামাকড় আক্রমন করতে পারে নাই। এমন কি ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হয় নাই এবং ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছে কৃষকেরা। এখন ধান কাটার মৌসুম ধান কাটা মাড়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এ উপজেলার ৩০% কৃষক তাদের ধান কাটা শেষ করেছে। তিনি আরো বলেন, এবারে চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের অধিক ফলন ও বাজার মূল্য ভালো পাওযায় বেশ খুশি উপজেলার কৃষকরা। এছাড়াও সরকারি মূল্যে ধান বিক্রির জন্য কৃষক নিবন্ধনের কাজ চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ কৃষকদের সর্বোচ্চ সহযোগীতা দিয়ে আসছে।